নেমকহারাম’রা ভাগ্যের শোচনীয়তা ভোগ করে: ডা. জসিম তালুকদার
আজ ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধ দিবস আজ থেকে ২৬৪ বছরের আগে নবাবের হৃদয়বিদারক পরাজয় ও বিশ্বাসঘাতকের শেষ পরিণতির ইতিহাস যে শিক্ষা দেয় তা জানা দরকার।
মীর জাফররা নিপাত যাবেই..
মীর জাফরের ছেলের নাম ছিল মীর মিরন। পলাশী যুদ্ধের সময় মীর মিরনের বয়স ছিল ১৮ বছর। রবার্ট ক্লাইভের প্রতিনিধি ওয়াটসনের কাছে সিরাজ-উদ-দৌলার বিপক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করে মীর জাফর। ওয়াটসন তার কথা তেমন বিশ্বাস করে নি। শর্ত জুড়ে দেয়। বলে দেয়, এক হাতে কুরআন এবং অন্য হাতে ছেলে মীর মিরনের মাথা ধরে শপথ করলেই বিশ্বাস করা হবে। মীর জাফর তা-ই করল। এক হাতে কুরআন এবং অন্য হাত ছেলের মাথায় রেখে বলল, “আমি ইংরেজ স্যারদের হয়ে নবাবের বিপক্ষে কাজ করব।”
পলাশী যুদ্ধ হল। ফলাফল তো জানিই। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ক্ষমতাচ্যুত হলেন। নির্মমতার মেনে নিতে হল তাকে। তার বিয়োগে মীর জাফররা সাময়িক আনন্দে মেতে উঠল। ‘জিতে গেছি’-টাইপের ভাব নিয়েছিল।
পলাশী যুদ্ধের ঠিক তিন বছর পর (৩ জুলাই ১৭৬০) মীর মিরন ভয়ানক এক বজ্রপাতে ভস্মিত হয়। দৈহিক ছুরতের মারাত্মক বিকৃতি ঘটেছিল। পুরো দেহ পুড়ে আঙ্গার হয়ে যায়। তখন মীর মিরনের বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। এমন টগবগে ছেলের লাশের ভার বাবার কাঁধটা ভেঙে দিয়েছিল।
এরপরে মীর জাফরের কুষ্ঠরোগ হয়। সারা শরীর বিষাক্ত পানি ভর্তি গুটিতে ভরে যায়। ফুসকুড়ির মতো। সেই রোগ থেকে আর নিস্তার পায় নি। কুষ্ঠরোগের তীব্রতা নিয়েই মৃত্যুবরণ করে সে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ‘মীর জাফর’ শব্দটি গালি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জগৎ শেঠ মহাতপ চাঁদ। জগৎ শেঠের অর্থ হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত ধনী। যার সম্পদের কোনো অভাব নেই তাদেরকে জগৎ শেঠ উপাধি দেওয়া হত। তার দাদার নাম ছিল ফতেহ চাঁদ। এই মহাতপ চাঁদ ইংরেজদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে। সেই ইংরেজদের মুদ্রা পরিবর্তন করে দিত। কারেন্সি কনভার্টার হিসাবে কাজ করত। ভারতীয় মুদ্রা রেখে সমমূল্যের সোনা-রুপা ইংরেজদেরকে প্রদান করত। যে কারণে তার সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক হয় গভীর। ইংরেজরা পলাশী যুদ্ধে তাকেও কাজে লাগায়। পরবর্তীতে মীর কাশেম তাকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ জারি করে। শেষ পর্যন্ত বুলেটের আঘাতে নিথর হতে হয় তাকে।
রবার্ট ক্লাইভ ভারতবর্ষের পুরো ক্রিজ দাবিয়ে খেলেও সুখী হতে পারল না। নবাবের নবাবী কেড়ে নিয়েও মনঃপীড়া থেকে রেহাই পায় নি। দুঃখকষ্টের পারদ এতো উপরে উঠেছিল যে, আত্মহত্যা করে মুক্তির পথ তালাশ করল। মুক্তি মিলেছে কি?
ইতিহাস এভাবে পুনরাবৃত্তি হয়। কোনো নিমকহারামই ভাগ্যের শোচনীয়তা ভোগ না করে দুনিয়া থেকে যায় নি। যাবেও না। ইতিহাস সেই সাক্ষী দেয় না।
আজকের মীর জাফররাও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকতে পারবে না। সম্ভব নয়। যারাই অন্যায়কারীদের হয়ে কাজ করবে তাদের পরিণতি একদিন-না-একদিন শোচনীয় হবেই।